এনআরবিসি ব্যাংকের সিন্দুক কেটে ৯ লাখ টাকা চুরি, নেই নৈশপ্রহরী-সিসি ক্যামেরা

Passenger Voice    |    ০৪:৪৩ পিএম, ২০২৪-০১-২৭


এনআরবিসি ব্যাংকের সিন্দুক কেটে ৯ লাখ টাকা চুরি, নেই নৈশপ্রহরী-সিসি ক্যামেরা

ঋণ আদায়ের জমাকৃত ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা সিন্দুকে রেখে সাপ্তাহিক ছুটিতে গিয়েছিলেন বগুড়া সদরের এনআরবিসি ব্যাংকের উপশাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই সুযোগে সিন্দুক কেটে সমস্ত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকের উপশাখাটিতে কোনো নৈশপ্রহরী ও সিসি ক্যামেরাও রাখেনি কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাতের কোনো এক সময় সদর উপজেলার শাখারিয়া পল্লীমঙ্গল হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে ওই ভবনের মালিক বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশে খবর দেন। ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়।

ভবনের মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় আড়াই বছর ধরে শাখারিয়া পল্লী মঙ্গলহাট এলাকায় একটি দুই তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় এনআরবিসি ব্যাংকের উপশাখার কার্যক্রম চলছিল।  ওই বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় আরও একটি ফ্ল্যাটে এসকেএস এনজিও এবং একটিতে বাড়িওয়ালা থাকেন।  দ্বিতীয় তলায় তিনটি পরিবার থাকে।

বাড়িওয়ালা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চোরেরা ছাদের ওপর দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছে। ছাদের দরজার পাশে ওপরের দিকে ইট ভেঙেছে তারা। এছাড়া আমাদের বিল্ডিংয়ের মেইন গেটের তালা কেটেছে। ভোর ৪টার পর আমার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বাথরুম থেকে এসে আমি দরজা খুলে বাইরে দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি দরজার খুলতে পারছিলাম না। বাইরে থেকে আমার দরজা বন্ধ করে দেওয়া ছিল। এরপর আমি আমার ভাড়াটিয়াকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তখন তিনিও জানান যে তার ঘরের দরজাও বাইরে থেকে আটকানো।

এরপর আমি আমার শ্যালককে ফোন দিই। এই অফিসের একজন ব্যক্তি এই এলাকাতেই থাকেন, তাকেও ফোন দেই। পরে নাইটগার্ড এসে আমাদের দরজা খুলে দেয়।  আমি বের হই এবং ওপর তলা থেকে ভাড়াটিয়ারাও নেমে আসে। তখন আমরা দেখতে পাই ব্যাংকের গেটে খোলা। পরে আমরা ব্যাংকের লোকজনকে জানাই। তাদেরকে আসার জন্য বলি। এরপর ৯৯৯ এ  কল দিলে ১০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ চলে আসে।  

এ সময় ভবনের মালিক জানান, তার বাড়িতে সিসি ক্যামেরা রাখা ছিল কিন্তু চোরেরা তার কেটে ফেলেছে।  

ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, উপশাখাগুলোয় শুধুমাত্র ঋণ প্রদান, আদায়ের কাজ করা হতো। এই শাখায় তিনজন স্টাফ ছিলেন। সাধারণত এ ধরনের শাখার আওতায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা থাকে। তবে বৃহস্পতিবার হিসাব ক্লোজের পর সেগুলো ব্যাংকে জমা দিয়ে দেন উপশাখাগুলোর স্টাফরা। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি দুটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের কিস্তি জমা দিতে দেরি হয়। এজন্য ব্যাংকে জমা দিতে পারেনি। তারপরই এমন ঘটনা ঘটে।

ব্যাংকের ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম বলেন, আজকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমাদের ক্যাশিয়ার ভাইয়ের কাছে থেকে খবর পাই আমাদের শাখায় চুরি হয়েছে। উনি জানতে পারছেন আবার ফিল্ড অফিসারের কাছে থেকে। খবর পেয়ে সকালে আমি এখানে আসছি। এসে দেখি আমাদের সিন্দুক যেটা ছিল সেটা ভেঙে টাকা যা ছিল সব নিয়ে গেছে।

শাখারিয়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, সকালে খবর পেয়ে ব্যাংকের এখানে এসেছি, ঘটনা দেখতে। এই ব্যাংকটি অনেকদিন ধরেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে পল্লীমঙ্গল হাটে। তবে ব্যাংকটিতে কোনো সিসি ক্যামেরা, প্রহরী কিছুই ছিল না। আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা আশা করব খুব দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।  

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, এনআরবিসির একটি উপশাখা এটি। এখানে কোনো ভল্ট নেই। শুধু একটি সিন্দুক রয়েছে। দুর্বৃত্তরা সেটি ভেঙে ৯ লাখ ৭৮ হাজারের কিছু বেশি টাকা নিয়ে গেছে। ৯৯৯ এ একটি কল পেয়ে আমাদের পুলিশ এখানে আসে। এটা যেহেতু একটি ব্যাংকের বিষয়। এখানে অনেক মানুষের আমানত আছে। এ জন্য থানা ও ডিবির টিম যৌথভাবে নামানো হয়েছে। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখছি। পাশাপাশি আমরা ব্যাংকগুলোর কাছে অনুরোধ করব তারা যেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।

প্যা/ভ/ম